বালুয়াকান্দি সূর্য্যমুখী সংগঠনের এক শ্রেষ্ঠ অর্জন
★বালুয়াকান্দি সূর্য্যমুখী সংগঠনের এক শ্রেষ্ঠ অর্জন ২০ জুলাই ২০২০
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। মেরুদন্ডহীন মানুষ যেমন সোজা হয়ে দাড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি টিকে থাকতে পারে না। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতিও করতে পারে না। যে জাতি যত বেশী শিক্ষিত সে জাতি তত বেশী উন্নত। শিক্ষা অজ্ঞতার অন্ধকারকে দূর করে। বালুয়াকান্দি সূর্য্যমুখী সংগঠনের ( সংবিধান ) গঠনতন্ত্রের ধারা অধ্যায়-৩ এর ক এ বলা আছে, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠা করা, রাস্তাঘাট নির্মাণ করা, গরিব ছাত্রদে সাহায্য করা এবং মসজিদের উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা করা। ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, কেউ যদি নিজেকে পন্ডিত বলে দাবী করে এবং তার যদি ইসলামিক জ্ঞান না থাকে তাহলে পন্ডিত শব্দের পূর্বে আরেকটি শব্দ যোগ করতে হবে। সেই শব্দটি হল মূ্র্খ। অর্থাৎ যে পন্ডিতের ইসলামী জ্ঞান নেই, সে হল মূর্খ পন্ডিত। তাই মানুষকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য, ইসলামের পতাকে উড্ডয়ন করার জন্য, আল্লাহর হুকুম ও হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) এর তরিকাকে জিন্দা করার জন্য, ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের দিলে ঈমান প্রবেশ করার জন্য এবং আমাদের সমাজকে ইসলামী শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য ২০০৯ সালে বালুয়াকান্দি সূর্য্যমুখী সংগঠনের উদ্যোগে বালুয়াকান্দিতে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার সিদান্ত নেয়া হয়। আমাদের গ্রামের সর্দার থেকে শুরু করে সর্ব শ্রেণীর জনগণকে নিয়ে বালুয়াকান্দি মোল্লা বাড়ির কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে ২০০৯ সালে একটি সাধারণ মিটিং এর আয়োজন করার হয়। সেই মিটিং এ আমি বক্তব্য শুরু করি। আমি সেখানে বলেছিলাম একটি সমাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই দিক দিয়ে আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রাম গুলো থেকে পিছিয়ে আছি। বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক দিয়ে। যেমন মজিদপুর, মোহনপুর, শাহপুর এবং ভাজরা গ্রামে মাদ্রাসা আছে। কিন্তু আমাদের গ্রামে কোন মাদ্রাসা নাই। ফলে এই গ্রামের মানুষ ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই আমরা বালুয়াকান্দি গ্রামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠ করতে চাই। এই ব্যাপারে আপনাদের মতামত জানতে চাই। আমার এই প্রস্তাবে উপস্থিত সকলে রাজি হয়ে যায়। সেই মিটিং এ নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়। ১. বালুয়াকান্দি মোল্লা বাড়ি কর্তৃক ওয়াকফকৃত পুকুরটি ভরাট করা। ২. সেই ভরাটকৃত পুকুরের উপর মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা। ৩. পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহের ময়দানে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরা। ৪. টাকা কালেকশন করা। সিদ্ধান্ত অনুসারে জনাব আনোয়ার হোসেন ( অনু ) সর্দার ঈদগাহের ময়দানে মাদ্রাসা প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন এবং পুকুরটি ভরাট করার জন্য টাকা কালেকশন শুরু করেন। প্রথমে জনগণকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আব্দুল আউয়াল মোল্লা ২০ হাজার টাকা দান করেন। এভাবে ৫ লক্ষ টাকা নগদ ও বাকীতে কালেকশন হয়েছিল। ঐ দিন সর্বোচ্চ টাকা দান করেছিলেন জনাব রাইজুদ্দিন সরকার। তিনি দান করেছিলেন ৫০ হাজার টাকা। এই ৫ লক্ষ টাকা ছাড়াও গ্রামের প্রতিটি ঘরে হার করে টাকা তুলা হয়েছিল। এভাবে প্রায় দশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পুকুরটি ভরাট করা হয়েছিল। কিন্তু একাডেমী ভবন তৈরী করার জন্য অবশিষ্ট টাকা ছিল না। আমরা সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। পরে টিনসেড ঘর তুলে মাদ্রাসা করার কথা ছিল। কিন্ত ভাগ্যের এক নির্মম ইতিহাসের কারণে মাদ্রাসা একাডেমী ভবন তৈরীর রাস্তা সহজ হয়ে গেল। সেটা হল বীরমুক্তিযুদ্ধা আঃ রশিদ সরকারের ছোট ছেলে মোঃ শহিদুল্লাহ সরকার হোন্ডা একসিডেন্ট এ মারা যায়। তাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তার অর্জিত টাকা থেকে মাদ্রাসার জন্য একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে দেয়। এই ভবনটির মাধ্যমে বালুয়াকান্দিতে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়ে গেল। আমাদের সবার চিন্তা দূর হয়ে গেল। এ যেন মরা ক্ষেতে পানি সেচের মত। তবে এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমাদের মসজিদের সাবেক ঈমাম জনাব আবুল খায়ের সাহেবের অনেক অবদান আছে। তিনি এই মাদ্রাসার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। ২০১৩ সালে ভবনটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ২০১৪ সালে জানুয়ারি মাস থেকে প্রায় ১২০ জন ছাত্র/ছাত্রী নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয় এবং পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। আমাকে সভাপতি, সফিউল্লাহ সরকারকে সহ-সভাপতি এবং রমজান সরকারকে সেক্রেটারি বানানো হয়। এভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা বেশী হওয়াতে একতলা ভবনে সংকুলান হয় না। তাই ভবনদাতা ও গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ করা হয়। ২০১৪-২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই পাঁচ বছরে শিক্ষাকার্যক্রমের উন্নয়ন ও বেতন বাবদ খরচ হয়েছে ১৯ লক্ষ ৬৩ হাজার ৮ শত ৫৫ টাকা। দুতলা ভবন নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় 8০ লক্ষ টাকা। পুকুর ভরাটসহ এ পর্যন্ত এই মাদ্রাসার পেছনে খরচ হয়েছে ৬৯ লক্ষ ৬৩ হাজার ৮ শত ৫৫ টাকা। এই টাকাগুলো নিজেরা দিয়েছি এবং মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে এনেছি। ইসলামের আলো ছড়াতে এবং বালুয়াকান্দির মানুষের মাথাকে উচু করতে আমরা এই মাদ্রাসা পরিচালনা করে যাচ্ছি। ২০১৯ সালের শেষের দিকে পূরান ও কিছু নতুন সদস্য নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ২০২০ সালে রমজান মাসে হিফজ বিভাগ চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্ত এই মহামারির কারণে হিফজ বিভাগ চালু হয়নি। পরিস্থিতি ভালো হলে অচিরেই এই বিভাগ চালু হবে ইনশাল্লাহ। বর্তমানে শুধু নূরানী বিভাগ আছে। নূরানী, হিফজ ও কিতাব বিভাগ। এই তিনটি বিভাগ চালু করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এই মাদ্রাসার যাত্রা শুরু। আশা করি, মহান আল্লাহ আমাদের এই আশা পূর্ণ করবেন। এই মাদ্রাসা থেকে হাফেজ ও আলেম বের হবে। পুরো গ্রাম ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত হবে।বর্তমানে এ মাদ্রাসাতে প্রায় ১৫ জন এতিম ও গরিব ছাত্র/ছাত্রী পড়াশোনা করে। তাদেরকে বই ফ্রি দেওয়া হয় এবং কোন বেতন নেওয়া হয় না। বালুয়াকান্দি যুব সমাজকে বলছি, মনে রেখ "যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার সময় তার।" এই সময়টাকে আর কখনো ফিরে পাবে না। মহান আল্লাহ ও যৌবনকালের এবাদতকে পছন্দ করেন। এসো নবীন দলে দলে ইসলামের পতাকা তলে, সূর্যমুখীর ছায়াতলে।
এম এম ওয়াসকুরুনী
বি এ (অনার্স) এম এ (ইংরেজি)
লেখক-আল আমিনস
স্পোকেন এন্ড রীটেন ইংলিশ অন গ্রামার।
Facebook ID: Al-Amin Molla
facebook Link below
https://www.facebook.com/alamin.molla.50951101
Yotube channel: English with Al-Amin Sir
Youtube channel Link Below
https://www.youtube.com/channel/UC1Dqed6CXIU7r5er7xjLTwQ
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বালুয়াকান্দি সূর্য্যমুখী সংগঠন।
Comments
Post a Comment